গাড়ি

গাড়ি

Price/10$
Automobile) হচ্ছে চাকাযুক্ত এক প্রকার মোটরযান, যা যাত্রী পরিবহণে ব্যবহৃত হয়। এটি যাত্রী পরিবহণের সাথে সাথে নিজের ইঞ্জিনও পরিবহণ করে। গাড়ি সংজ্ঞার্থে ব্যবহৃত বেশিরভাগ যান রাস্তায় চলার জন্য তৈরি করা হয়, সাধারণত এক থেকে আট জন মানুষ বহন করতে পারে ও চাকার পরিমাণ থাকে চার। এটি মালপত্র পরিবহণের তুলনায় মূলত মানুষ বা যাত্রী পরিবহণের জন্যই তৈরি করা হয়।[১]
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬০ কোটি যাত্রীবাহী গাড়ি রয়েছে (গড়ে প্রতি এগারো জনের জন্য একটি গাড়ি)।[২][৩] ২০০৭ সালে বিশ্বের রাস্তাগুলো দিয়ে প্রায় ৮০ কোটি ৬০ লক্ষ গাড়ি ও হালকা ট্রাক চলাচল করেছে এবং সেগুলো এক বছরে প্রায় ১০০ কোটি ঘনমিটার পেট্রোল বা গ্যাসোলিন এবং ডিজেল পুড়িয়েছে। এই সংখ্যাগুলো বর্তমানে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে চীন ও ভারতে[৪]
কলম

কলম


কাগজ অনলাইন ডেস্ক: ইংরেজি পেন (penna) শব্দ এসেছে লাতিন শব্দ পেন্না (pen ) থেকে , যার মানে হল পাখির পালক । এক কালে পালকের কলম ব্যবহার হত, আমাদের বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষে অবশ্য খাগের কলম ব্যবহার হত ।
কলমের আবিষ্কার : আদিম অবস্থায় মানুষ যখন গুহায় ভিতরে বাস করত তখন গুহার ভিতরের দেওয়ালে কোন তীক্ষ জিনিস দিয়ে ছবি আকঁত বা হিজিবিজি আকঁত যাকে । আবার অনেক সময় কোন পাতা বা শিকারের রস বা রক্ত দিয়ে আকিবুকি কাটত । তার অনেক পরে যখন সভ্যতার একটু একটু উন্মেষ ঘটল তখন কাদামাটির পাটায় বা নরম পাথরে লিখা শুরু করে ,এদের মাঝে চীনে উটের লোম দিয়ে তৈরি তুলির ব্যাবহার লক্ষ করা যায় ।
তবে প্রথমে মিশরীয়রা একটা কাঠির ডগায় তামার নিবের মত কিছু একটা পরিয়ে লিখা শুরু করে । আর প্রায় হাজার চারের বছর আগে গ্রীসবাসীরা রীতিমত লিখা শুরু করে দেয় ।এদের কলম তৈরি হত হাতির দাঁত বা এই জাতীয় কিছু দিয়ে ।যার নাম ছিল স্টাইলস (Stylus ) । সেজন্য এখনও লিখার ধরন কে ” স্টাইল ” (Style)বলা হয়ে থাকে ।আর মধ্যযুগে কাগজের আবিস্কারের পরে পালকের কলম দিয়ে লিখা প্রচলিত হয় ।
আধুনিক কলমের আবিষ্কার : ইংল্যান্ডে ১৭৮০ সালে নিব পরান কলমের প্রচলন ছিল কিন্তু তার প্রায় ৫০ বছর ধরে খুব একটা ব্যবহার হত না । ১৮৮৪ সালে ওয়াটারম্যান (L.E.Waterman ) আবিস্কার করেন ফাউন্টেন পেন । তবে এর নিব তৈরিতে প্রয়োজন হত ১৪ ক্যারেট সোনা । আর ডগা তৈরিতে লাগত ইরিডিয়াম ।
এরপরে অনেক দেশও ফাউন্টেন পেন তৈরি করা শুরু করে । আর বিংশ শতাব্দীতে তৈরি হয় বল পয়েন্ট পেন বা বল পেন (Ball point pen বা ball pen ) ।
বাংলার বাঘ

বাংলার বাঘ



ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৩০ সালের দিকে বাংলাদেশের ১৭টি জেলার মধ্যে ১১টি জেলায় বাঘ ছিল, কিন্তু বর্তমানে বাঘ শুধুমাত্র সুন্দরবনেই টিকে রয়েছে। পৃথিবীতে বাঘের যে সকল আবাস রয়েছে সুন্দরবন তার অন্যতম। আয়তনের দিক থেকে শুধু নয়, বাঘের সংখ্যার দিক থেকেও। বন বিভাগের ২০০৪ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে ৪১৯টি বাঘ আছে বলে জানা গিয়েছিল। ২০০৯ সালের আরেকটি গবেষণায় এ সংখ্যা ৩০০ থেকে ৫০০ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বন বিভাগ দুবছরেরও বেশি সময় ধরে বাঘ গণনার জন্য ‘ক্যামেরা ট্র্যাপ’ জরিপ চালিয়ে আসছে। আমরা অচিরেই সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যার একটি ধারণা পাব। তবে সার্বিক দৃষ্টিতে এটি প্রায় নিশ্চিত যে, সুন্দরবনে বাঘেরা মোটেই ভালো নেই। একদিকে চোরাশিকারীর অপতৎপরতা, অন্যদিকে রয়েছে খাদ্য-সংকট। এছাড়া বাঘের আবাস-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মাত্রার নানা ধরনের হুমকি তো রয়েছেই।
বাঘ এমন একটি আইকনিক ও রাজকীয় প্রাণি যা যে কোনো দেশের জন্য গর্বের বিষয়। বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘ নামটিও আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। একটি দেশকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করার অনেক উপায় বা উপাদান থাকে। আমাদের দেশে বাঘ তেমন একটি ভালো নিয়ামক। প্রতিবেশিক দিক থেকে বিবেচনায় নিলে সুন্দরবনে বাঘের গুরুত্ব অপরিসীম। বাঘ সুন্দরবনের ইকোসিস্টেমের ‘কিস্টোন’ প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কিস্টোন শব্দটির সরল অর্থ হল, সুন্দরবনে বাঘ বেঁচে থাকলে সেখানে প্রাণবৈচিত্র্য টিকে থাকবে। বাঘ হারিয়ে গেলে সুন্দরবনের ধ্বংস ত্বরান্বিত হবে। সুন্দরবন বাঁচলে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকার প্রবাহ অব্যাহত থাকবে।
১৩ দেশে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা প্রায় ৩,৫০০, ১৯০০ সালের দিকে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ
১৩ দেশে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা প্রায় ৩,৫০০, ১৯০০ সালের দিকে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ
দুর্ভাগ্য হল, বাঘ আমাদের দেশে মহাসংকটাপন্ন প্রাণি। বাঘ বাঁচার পথে যে সকল হুমকি সৃষ্টি হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
কাগজের হিসাবে পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে প্রাকৃতিক আবাসে বাঘ বেঁচে আছে। যদিও বাস্তবে কয়েকটি দেশ থেকে ইতোমধ্যে বাঘ বিলুপ্তির আশংকা করা হচ্ছে। এই ১৩টি দেশে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা প্রায় ৩,৫০০। ১৯০০ সালের দিকে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ। তখন ৩৩টি দেশে প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঘ বিচরণ করত। গবেষণায় দেখা যায়, পূর্বে যে সকল এলাকায় বাঘ ছিল বর্তমানে তার মাত্র ৭ শতাংশ জায়গায় প্রাণিটি টিকে রয়েছে।
বাঘের প্রজাতি একটি; উপপ্রজাতি ৯টি। ইতোমধ্যে ৩টি উপপ্রজাতি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। উপপ্রজাতির সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। সুন্দরবনে যে বাঘ রয়েছে সেটি প্যানথেরা টাইগ্রিস উপপ্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্বজুড়ে বাঘের যে ৬টি উপপ্রজাতি টিকে রয়েছে তার মধ্যে এটির সদস্যই সবচেয়ে বেশি। পার্শ্ববর্তী ভারতেই বাঘের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যা সর্বমোট সংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ।
বাঘ আমাদের জাতীয় প্রাণি। একে নিয়ে আছে কিংবদন্তী, রূপকথা আর রহস্যভরা গল্পগাথা। আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলকে আমরা ‘টাইগার’ বলে ডাকতে গর্ববোধ করি। আবার আমরা এতটাই সৌভাগ্যবান যে, সুন্দরবনের মতো এমন একটি বাদাবন আমাদের দেশে রয়েছে। এটি প্রকৃতির অপার সৃষ্টি, নয়নাভিরাম সবুজের এক অখণ্ড লীলাভূমি। বাদাবনই আমাদের বাঘের বসতি। নির্দিষ্টভাবে বলা যায়, সুন্দরবনই আমাদের দেশে বাঘের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল।
সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর ৬০ শতাংশ আমাদের দেশে আর বাকি ৪০ শতাংশ ভারতের মধ্যে পড়েছে। সে হিসাবে, আমাদের দেশে রয়েছে ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চল। ধারণা করা হত, সুন্দরবনেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘ। কিস্তু বাস্তবতার সঙ্গে বাঘের এই ধারণাকৃত সংখ্যার বিস্তর তারতম্য ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।
অনেকেই বলেন, সুন্দরবনে বাঘ তো না থাকাই ভালো। প্রতি বছর অসংখ্য জেলে, মৌয়াল ও বাওয়ালিরা বাঘের পেটে যায়। বাঘ না থাকলেই তো ল্যাঠা চুকে যেত। বনজীবীরা নিরূপদ্রবে সুন্দরবন থেকে জীবিকা আহরণ করতে পারতেন। বাঘ সংরক্ষণে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করার প্রয়োজন পড়ত না।
সাধারণ ভাবনায় এমনটি মনে হতেই পারে যে, বাঘের সংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কী আছে? সেটি ৪১৯ হোক কিংবা ১১৯! বিশেষজ্ঞদের মতে, উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তবে এটি এখানে নয়, অন্য একটি নিবন্ধে বিস্তারিত বলার ইচ্ছা আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাঘ ও বাঘের প্রধান খাদ্য চিত্রা হরিণের চোরাশিকার সুন্দরবনে বাঘ বেঁচে থাকার পথে প্রধান হুমকি। বিভিন্ন রিপোর্টের তথ্য থেকে জানা যায়, সুন্দরবন থেকে প্রতি বছর অন্তত দুটি বাঘ চোরাশিকারির হাতে মারা পড়ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সংখ্যাটি আরও বেশি হবে। কারণ, এ ধরনের অপরাধের ঘটনা খুব কমই ধরা পড়ে বা জানা যায়।
এটিও লক্ষণীয় যে, সাম্প্রতিক সময়ে বাঘ শিকারের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত দুবছর বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বাঘের চামড়া ও হাড় আটকের ঘটনা এই আশঙ্কার প্রতিধ্বনি করে। ২০১২ সালের ১১ জুন ঢাকার শ্যামলীর এক বন্যপ্রাণি চোরাশিকারীর বাসা থেকে যখন র‌্যাব তিনটি বাঘের শাবক উদ্ধার করে তখন একটি ইংরেজি সাপ্তাহিকে লিখেছিলাম যে, সুন্দরবনে যেভাবে শিকারীরা অপতৎপরতা চালাচ্ছে, হয়তো সেখান থেকে অচিরেই বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটি এখানে উদ্ধৃত করার কারণ, বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এটি বেশ প্রাসঙ্গিক। সুতরাং গুরুতর প্রশ্ন হল, আর কতদিন এ শিকার অব্যাহত থাকবে? বাঘের সংখ্যা আর কত নিচে নামবে?
গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো বন্যপ্রাণির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেলে প্রকৃতিতে সে প্রাণির টিকে থাকার সম্ভাবনা একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে যায়। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বর্তমানে সে রকমই একটি জায়গায় নেমে আসতে পারে। এমনিতেই সুন্দরবন বাঘের জন্য তেমন অনুকূল আবাস নয়, তার উপর রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা হুমকি। সমুদ্র সমতল থেকে সুন্দরবনের বেশিরভাগ এলাকার গড় উচ্চতা এক মিটারেরও কম। ফলে জোয়ার-ভাটার সময় বনের এক বিশাল অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। তাছাড়া, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় পুরো সুন্দরবনই বাঘের বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে আমরা আইলা বা সিডরের কথা স্মরণ করতে পারি। সে রকম একটি পেক্ষাপটে সুন্দরবনে বাঘ কতদিন টিকে থাকবে সেটি বড় প্রশ্ন।
গবেষণায় আরও জানা যায়, কোনো প্রজাতি অল্প সংখ্যায় প্রকৃতিতে বেঁচে থাকলেও তাদের জেনেটিক গঠনে একটি গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয় যা পরবর্তীতে ঐ প্রজাতিকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেয়। তার মানে, প্রকৃতিতে উক্ত প্রজাতির দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে।
নানা ধরনের হুমকি থাকা সত্ত্বেও সুন্দরবনের আয়তনের বিশালতা এরং ‘ধারণাকৃত’ বাঘের সংখ্যার জন্য সুন্দরবনকে বাঘ টিকিয়ে রাখার একটি ভালো এলাকা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। বৈশ্বিক দৃষ্টিতে সুন্দরবনকে তাই ‘প্রথম শ্রেণির বাঘ সংরক্ষণ ল্যান্ডস্কেপ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, ‘সুন্দরবন হল এমন একটি অঞ্চল যেখানে বাঘ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবে।’
১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কো সুন্দরবনের আওতাধীন তিনটি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য এলাকা ‘বিশ্বঐতিহ্য’ ঘোষণা করে। ফলে সুন্দরবন বাংলাদেশকে যেমন বিশ্বদরবারে এক অন্যমাত্রায় হাজির করেছে, আবার এই বিশ্বসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের গুরুদায় আমাদের। অন্যদিকে, রামসার কনভেনশনের আওতায় ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে ‘রামসার এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে।
বৈশ্বিক দৃষ্টিতে আমাদের সুন্দরবনকে ‘প্রথম শ্রেণির বাঘ সংরক্ষণ ল্যান্ডস্কেপ’ ঘোষণা করা হয়েছে
বৈশ্বিক দৃষ্টিতে আমাদের সুন্দরবনকে ‘প্রথম শ্রেণির বাঘ সংরক্ষণ ল্যান্ডস্কেপ’ ঘোষণা করা হয়েছে
সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবাহিত ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী বনের মোট আয়তনের প্রায় ৩০ শতাংশ। এই বিশাল জলরাশি সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ জলজ ইকোসিস্টেম গঠন করেছে। এখানে রয়েছে এই ইকোসিস্টেমের সর্বোচ্চ খাদক প্রাণি লোনাপানির কুমির। রয়েছে বৈচিত্র্যময় প্রজাতির মাছ, শামুক, কাঁকড়া আর উল্লেখযোগ্য জলজ স্তন্যপায়ী, যেমন, গাঙ্গেয় ও ইরাবতি শুশুক এবং দৃষ্টিনন্দন নখরবিহীন ভোঁদড়।
ইতোমধ্যে আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বাঘ সংরক্ষণের জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করতে দেখেছি। আমরা স্মরণ করতে পারি যে, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত প্রথম বাঘ সম্মেলনে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতি দেন। সুতরাং এটি পরিষ্কার যে, বাঘ শুধু একটি প্রাণি নয়, এটি জাতীয় সম্পদ। সর্বোচ্চ পর্যায়ের সে অঙ্গীকারের প্রতিফলন কি আমরা মাঠ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার মধ্যে দেখতে পাই?
এই প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ বোধক’ হলে সুখের বিষয় হত। বাস্তবতা সে রকম নয়। গত কয়েক বছরে বাঘ পাচারকারী থেকে উদ্ধারকৃত বাঘের চামড়া ও হাড়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এটি সহজেই প্রতীয়মান হবে। সুতরাং এটি পরিষ্কার যে, স্থানীয় পর্যায়ে সুন্দরবন ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের দুর্বলতা রয়ে গেছে।
আমরা জানি যে, আমাদের বন বিভাগে প্রয়োজনীয় লোকবল ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এটি অস্বাভাবিক নয়। তবে গত কয়েক বছরে বন বিভাগ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উল্লিখিত সীমাবদ্ধতা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে, সুন্দরবন ইকোসিষ্টেম ও লাইভলিহোড সিকিউরিটি (SEALS) প্রকল্প এবং স্ট্রেংদেনিং রিজিওনাল কোঅপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রটেকশন (SRCWP) প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা যায়। এর মধ্যে প্রথম প্রকল্পটি শুধুমাত্র সুন্দরবনকে সামনে নিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সুন্দরবন রক্ষায় বন বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বননির্ভরশীল স্থানীয় মানুষের বিকল্প জীবিকায়ানের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। আর দ্বিতীয়টিরও উল্লেখযোগ্য অংকের অর্থ সুন্দরবনের ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের জন্য বরাদ্দ আছে।

সুতরাং বাঘ ও সুন্দরবন সংরক্ষণে মাঠ পর্যায়ে আমরা এখন দৃশ্যমান ও ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করতে পারি। আরও নির্দিষ্টভাবে বলা যায়, বাঘ ও হরিণ-শিকারীদের লাগাম টেনে ধরার সময় এখনই। বাঘ গবেষক হিসেবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সুন্দরবনের বাঘকে আমরা অবশ্যই বাঁচাতে সক্ষম হব। আমাদেরকে পারতেই হবে– এই দেশের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। বাঘ শুধুমাত্র জাতীয় ক্রিকেট দলের লোগোতেই নয়, আমাদের সুন্দরবনেও বেঁচে থাকবে।
গল্প

গল্প



চৈত্রের প্রখর রোদের মধ্যে এক পথে একজন পথিক (প্রথম পথিক) হাঁটছিলেন। অনেকক্ষণ হাঁটার ফলে ক্লান্ত পথিক তাঁর সামনে একটি বটবৃক্ষ ও সুপেয় পানির সন্ধান পেলেন। পানি পান করে বিশ্রামের পর তিনি বটবৃক্ষের কিছু পাকা ফল ও একটি পাত্রে কিছু পানি নিয়ে আবার তাঁর গন্তব্যের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করলেন। অনেকটা পথ হাঁটার পর একটা জায়গায় এসে তাঁর মনে হলো, আগের বিশ্রামের জায়গাটির মতো যদি এখানেও একটি জায়গা তৈরি করা যেত, তাহলে আমার মতো অনেকেই হয়তো বিশ্রাম নিতে পারত। যেই ভাবা সেই কাজ ৷ তিনি তাঁর তেষ্টার পানি টুকুন দিয়ে ওই রাস্তার পাশে বটবৃক্ষের ফলগুলো পুতে দিলেন। সময়ের পরিক্রমায় বটবৃক্ষ বিশাল এক ছায়াবৃক্ষে পরিণত হলো।
কয়েক বছর পর ওই একই পথে আরেকজন পথিক (দ্বিতীয় পথিক) এক পরিচিতজনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথের ক্লান্তি দূর করতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বটবৃক্ষের ছায়া পেয়ে তিনি খুব পুলকিত হলেন এবং বটবৃক্ষের রোপণকারীকে মনে মনে অনেক ধন্যবাদ দিলেন ও সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর মঙ্গলের জন্য দোয়া করলেন। পরিচিতজনের বাড়িতে গিয়ে তিনি তার সঙ্গে গল্পের এক পর্যায়ে বললেন, বটবৃক্ষের ছায়া থাকায় আসার পথে তিনি অনেক স্বস্তি পেয়েছেন। এটা শুনে তাঁর পরিচিতজন বললেন যে, শেষের বটগাছটি তারই লাগানো ৷ তাঁর ইচ্ছা ছিল ওখানে একটি সুপেয় পানির উৎসের ব্যবস্থাও করবেন ৷ কিন্তু অসুস্থতার জন্য তা আর করা হয়নি। দ্বিতীয় পথিক মনে মনে চিন্তা করলেন, এই ব্যক্তির কাজের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এই ভাবনা থেকেই তিনি একটা সাইনবোর্ড এ লিখলেন, ‘এই গাছের রোপণকারী এক্স সাহেব, তিনি এখন অসুস্থ ৷ আপনারা যাঁরা এখানে বসে বিশ্রাম করবেন, সবাই তাঁর জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করবেন৷ ’ প্রথম পথিকের স্থায়ী ঠিকানাও তিনি ওখানে যুক্ত করে সাইনবোর্ডটিকে বটবৃক্ষের কাছে স্থাপন করলেন।
এর অনেক দিন পর একজন খুব বুদ্ধিমান ও মেধাবী (তিনি নিজেকে তা-ই মনে করেন) পথিক (তৃতীয়) ওই একই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। স্বভাবতই তিনি প্রথম বৃক্ষের ছায়া ও পানি পান করে অভিভূত হলেন। দ্বিতীয় বৃক্ষের কাছে গিয়ে পানি না পেয়ে তিনি কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেন ৷ মনে মনে বললেন, কোন নির্বোধ লোক এই কাজ করল যে শুধু একটি গাছ রোপণ করল? এইটুকুন বুদ্ধি নাই যে গাছের সঙ্গে পানিও রাখতে হয়? এই বলে সে যখন মনে মনে ওই ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা নিয়ে মনে মনে হাসছিল, সেই মুহূর্তে তাঁর চোখে সাইনবোর্ডটি পড়ল। এর লেখা পড়ে তো বুদ্ধিমান পথিকের মাথা আরও খারাপ হয়ে গেল। নিজের দেশের মানুষদের এমন নির্বোধ এক লোককে এত শ্রদ্ধা দিতে দেখে মনে মনে চিন্তা করলেন, তিনি পরিকল্পিত একটি বিশ্রামস্থল তৈরি করবেন ৷ এরপর ওই ব্যক্তি ও অন্যদের বুঝিয়ে দেবেন যে সত্যিকারের প্রশংসা কারা পেতে পারে। তিনি তাঁর ঝোলা থেকে বৃক্ষের বীজ নিয়ে আগের গাছের বিপরীত দিকে রোপণ করলেন ও পরিচর্যা করতে লাগলেন।
একদিন এক সাধারণ বৃদ্ধ পথিক ওই পথে যাচ্ছিলেন এবং তিনি বুদ্ধিমান পথিককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি বাপু এখানে কিসের পরিচর্যা করছো? ’ বুদ্ধিমান পথিক উত্তর করলেন, ‘আমি এই গাছের ছায়ার চেয়ে অনেক বড় ছায়া এবং আরও ভালো বিশ্রামস্থল তৈরির কাজ করছি। ’ বৃদ্ধ বললেন, ‘এখানে একটা গাছ থাকতে আরেকটা গাছের কী দরকার? ’ জবাবে বুদ্ধিমান পথিক উত্তর দিলেন, ‘বুড়ো হতে হতে আপনার বুদ্ধি তো সব নষ্ট হয়ে গেছে, যান নিজের পথে হাঁটেন, আমাকে জ্ঞান দেওয়া লাগবে না, আমি অনেক বুঝি। ’ বৃদ্ধ পথিক যাওয়ার পর তার মেধাবীরে মাথায় আরেকটা বুদ্ধি হলো যে, সে আগের গাছটাকেও মেরে ফেলবে ৷ অন্যথায় এই বৃদ্ধের মতো অনেক নির্বোধ তার মহৎ উদ্দেশ্যটা উপলব্ধিই করতে পারবে না।
যেই ভাবা সেই কাজ ৷ বুদ্ধিমান পথিক প্রতি রাতে বটবৃক্ষের একটি একটি করে শিকড় কাটতে থাকলেন। এত দিনে তার রোপণ করা গাছও এক হাতের মত বড় হয়েছে ৷ কিন্তু আগের বটবৃক্ষটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছিল। এমন অবস্থা দেখে যখন কোনো পথিক বুদ্ধিমান পথিককে জিজ্ঞেস করত, ‘কি হে ভাই, এত বড় গাছটা মরে যাচ্ছে যে, কিছু দেন নাকি? ’ প্রত্যুত্তরে বুদ্ধিমান পথিক বলতেন, ‘আরে এই গাছটা যে ব্যাটা লাগিয়েছে সে তো বোকা ছিল ৷ গাছের বাঁচার জন্য যে পানি দরকার, সে ব্যবস্থা সে করে নাই ৷ আর আমি তো আমার গাছ বড় করা নিয়েই ব্যস্ত, ওর গাছে আমি পানি দেব কেন? কিছুদিন অপেক্ষা করো আমার এই গাছ অনেক বড় হবে এবং আমি এখানে সুপেয় পানির ও ব্যবস্থা করব। ’
এভাবে দিন যায় মাস যায় কিন্তু বুদ্ধিমান পথিকের গাছ আর বড় হয় না। কিন্তু এত দিনে পূর্বের বটবৃক্ষও মরে গেছে। একদিন ওই বৃদ্ধ আবার এলেন এবং বুদ্ধিমান পথিককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হে বাপু, কোথায় তোমার বিশ্রামস্থল? ’ এই বলে তিনি বুদ্ধিমান পথিকের রোপণ করা গাছের কাছে এসে দেখে বললেন, ‘এ তো দেখি পাকুন্দগাছ (এক ধরনের গুল্ম জাতীয় গাছ, যার পাতা দেখতে বটবৃক্ষের মতো এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে) ৷ এটা কীভাবে ছায়া দেবে? ’ এই কথায় বুদ্ধিমান পথিক খুব খেপে গিয়ে বললেন, ‘তোমাদের এই এক দোষ, কোনো ভালো কাজের স্বীকৃতি দিতে জানো না৷ আমি যে এত কষ্ট করে এত জরুরি একটা ঔষধি গাছ এখানে রোপণ করে পরিচর্যা করে এত বড় করালাম, এর কোনো স্বীকৃতিই দিলে না? ’ জবাবে বৃদ্ধ পথিক বললেন, ‘এই পথের কাছে আমাদের ছায়া এবং পানির দরকার, এখানে এই ঔষধি গাছ দিয়ে আমরা কী করব বাপু? ’ এই কথা বলে বৃদ্ধ আপনমনে বিড়বিড় করতে করতে ওই স্থান ত্যাগ করলেন।
তৃতীয় বুদ্ধিমান পথিক এতটাই বুদ্ধিমান যে, তার মাথায় এইটুকুন বুদ্ধি এল না যে, ‘আমি প্রথম পথিক যে পর্যন্ত তৈরি করেছেন সেইটুকুর চারদিকে সুন্দর করে বাঁধিয়ে দিয়ে একটি সুপেয় পানির উৎসের ব্যবস্থা করে দিলেও লোকে আমার নামেও ধন্যবাদসূচক এমনি একটা নামফলক এখানে লাগাতে পারে এবং একই সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় পথিকের জন্যও দোয়া করবে। ’ আমরা বাঙালিরা আসলে কারও ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নিজের দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেয়ে এই তৃতীয় পথিকের মতো ভিত্তি তৈরি করতেই বেশি পছন্দ করি।
আমাদের বাংলাদেশের ৫ শতাংশ লোক হলো প্রথম পথিকের মতো ৷ ১০ শতাংশ হলো দ্বিতীয় পথিকের মতো ৷ ৭৫ শতাংশ লোক হলো তৃতীয় পথিকের মতো ৷ বাকি ১০ শতাংশ অন্যান্য চরিত্রের ৷ যার কারণে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও আমরা ওই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। একই কাজ বার বার করে আত্মস্বীকৃত মেধাবী বা বুদ্ধিমান অথবা পরোপকারী হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত আছি। অথচ উন্নত দেশগুলোতে বেশির ভাগ লোকই প্রথম পথিকের মতো ৷ অল্প কিছু সংখ্যক বাদে সবাই দ্বিতীয় পথিকের মতো। তৃতীয় পথিকের মতো লোক নাই বললেই চলে ৷ তাই এদের উন্নয়ন বা সামনে এগিয়ে যাওয়া ঠেকাতে পারে না।
তাই সত্যিকারে আমাদের যা করা উচিত তা হলো, এই গল্পের তৃতীয় পথিকের মতো নতুন গাছ না লাগিয়ে যে গাছ আছে, তার সৌন্দর্য বর্ধনে মনোযোগী হওয়া। এতে করে ১০ বছরে না হোক আগামী ১৫ বছরে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২৫ বছরের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারব। অন্যথায় এই তৃতীয় শ্রেণির লোকজনের এমন আগ্রাসী মনোভাবের কারণে সব বটগাছ ধ্বংসের ফলে পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা বটের সুশীতল ছায়া তো দিতেই পারব না বরং পাকুন্দগাছ দেখিয়ে তাঁদের বটগাছ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। উপরন্তু সব চৈত্রের খরতাপ রৌদ্র এবং শ্রাবণের বর্ষার মধ্যেই ছায়া ছাড়া এক দুঃস্বপ্নের পথ তাদের পারি দিতে হবে।
বন্ধু

বন্ধু



বন্ধুত্ব মজার সম্পর্ক। অন্য সব সম্পর্কের মতো বন্ধুত্বে কোনো বস্তুগত দায়বদ্ধতা নেই বললেই চলে। বাকি অনেক সম্পর্কের মতো বন্ধুত্বে কোনো আইনি বা পারিবারিক বাধ্যবাধকতাও নেই। পুরোটাই মনের মিল। সেই মিল বিভিন্ন রকম হতে পারে। সে কারণেই বন্ধুও বিভিন্ন ধরনের হয়।
কিছু বন্ধুত্ব হয় একই ধরনের আগ্রহ বা শখের জায়গা থেকে। দুজন খুব ক্রিকেট অনুরাগী মানুষ বন্ধু হতে পারেন, যদিও তাঁদের আর কোনো বিষয়ে মিলের জায়গা নেই, অথবা থাকলে তাঁরা সেটা জানেন না। আমার এ রকম একজন বন্ধু সজল। পাহাড়ের ব্যাপারে তার গভীর আগ্রহ। আমারও। অবশ্য আগ্রহ-মিটারে সে আমার চেয়ে বেশ কয়েক ডিগ্রি ওপরে। যেখানে আমার শখ পাহাড়ের কাছে যাওয়া, তার কাজ পাহাড়ে চড়া। তার কাছ থেকে পাহাড়ের গল্প শুনি। পর্বতারোহীদের গল্প শুনি। সে আমার আগ্রহ দেখে মজা পায়, আমাকে গল্প শুনিয়ে মজা পায়। এই আমাদের বন্ধুত্বের ভিত্তি। এর বাইরে একজন আরেকজনের ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানি না। জানার প্রয়োজনও বোধ করি না। আমাদের বন্ধুত্বের জন্য পাহাড়ের ভালোবাসাই যথেষ্ট।
..অভিজ্ঞতা অথবা আগ্রহের মিল নেই; কিন্তু কোথায় যেন এক আত্মিক টান আছে। সে কারণেও গভীর বন্ধুত্ব হতে পারে। আমেরিকায় ইউনিভার্সিটি-জীবনে জিনার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ইউনিভার্সিটিতে থাকাকালীন হয়তো একজন আরেকজনের সঙ্গে আড্ডা হয়েছে হাতে গোনা কয়েকবার। ইউনিভার্সিটির পরে আমরা কখনোই আর এক জায়গায় থাকিনি। দেখাও হয়নি। তবে বছরের পর বছর বন্ধুত্ব টিকে গেছে। যোগাযোগ বিছিন্ন হয়েছে বেশ কয়েকবার, তারপর কোনো না কোনোভাবে একজন আরেকজনকে খুঁজে বের করেছি। আমাদের জীবন প্রায় সব ক্ষেত্রেই ভিন্ন। আগ্রহ, ধর্ম, বর্ণ, অভিজ্ঞতা। তারপর বন্ধুত্ব অটুট। একজন আরেকজনের দুঃখ-কষ্ট, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গভীর আলোচনা। আলোচনা শেষে আবার মাসের পর মাস হয়তো কয়েক বছর যোগাযোগ বিছিন্ন। আবার গভীর আলোচনা। গভীর কৌতূহল। গভীর সখ্য।
তারপর ধরা যাক আমার ফারুক ভাইয়ের কথা। আগ্রহের জায়গা থেকে আমাদের দুজনের মধ্যে মিল কিছু আছে বৈকি। তবে আমাদের বন্ধুত্বের ভিত্তি একজন আরেকজনের সঙ্গে অমিলের জায়গাগুলো খুঁজে বের করে সেটা নিয়ে একজন আরেকজনকে খোঁচানো এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভয়ংকর ধরনের তর্ক-ঝগড়া করা। কোনো এক কারণে এতেই বন্ধুত্ব আরও শক্ত হয়ে ওঠে। একজন আরেকজনের প্রতি স্নেহ-মমতা বাড়ে।
একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটানো, অনেক অভিজ্ঞতা শেয়ার করাই হয়তো বন্ধুত্বের সবচেয়ে প্রচলিত কারণ। আতিফ আমার কলেজজীবন থেকে সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের মধ্যে একজন। কলেজের পর এক শহরে থাকলে যতটুকু সময় পাই তার সঙ্গে বেশি সময় কাটানো হয়। গান শোনা, খেলা দেখা, আড্ডা, জীবনে প্রেম এবং নারী-সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে আলোচনা, আর যা কিছু আছে সব নিয়েই আমাদের বন্ধুত্ব। আতিফের পরিবারের সবাই আমার পরিবারের মতো হয়ে গেছে। আমার পরিবারের সদস্যরাও আতিফের কাছে তা-ই।
আতিফ, সজল, ফারুক ভাই, জিনা—সবার সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব অবিস্মরণীয় এবং সুমধুর। অথচ বন্ধুত্বের সূত্র ক্ষেত্র ও কারণে কিন্তু কোনো মিল নেই। মিল শুধু একটি জায়গায়। তাঁরা আর কেউ আমার সঙ্গে এখন নেই। চলে গেছেন। এই পৃথিবী থেকে তাঁদের আমি হারিয়েছি।
বন্ধুত্ব নিয়ে আমরা অনেক সময়ই নানা ধরনের দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকি। কোনটা আসল বন্ধুত্ব, কে প্রকৃত বন্ধু? এসব নিয়ে আমরা মনে হয় একটু বেশি চিন্তা করি। এই লেখার শুরুতেই যা বললাম। বন্ধুত্বের ব্যাপারে অসাধারণ বিষয়টি হচ্ছে যে বন্ধুত্বে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সে কারণেই আমার মনে হয় বন্ধুত্বের ব্যাপারে নিয়মেরও প্রয়োজন কম। যদি একজন আরেকজনকে নির্মল আনন্দ দিতে পারি, যদি সম্পর্কের কারণে জীবনের প্রতি ভালো লাগা বাড়ে তাহলেই বন্ধু। সেই বন্ধুত্ব যদি পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রেখে চালিয়ে যাওয়া যায় তাহলে সম্পর্ক গভীর হতে বাধ্য।
বন্ধুদের কাছে বেশি প্রত্যাশা করাও উচিত না। নিজের বিপদ হবে জেনেও যে বন্ধু পাশে দাঁড়ায় সে হচ্ছে ব্যতিক্রম ধরনের বন্ধু। 
এমন বন্ধু জীবনে কমই হবে সেটাই স্বাভাবিক।
২০১৬ বছরটিতে ব্যক্তিগত জীবনে কিছু বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হয়েছি। সেই বাধার মোকাবিলা করছি এবং করব। করতেই হবে। থামার তো কোনো উপায় নেই। তবে কঠিন সময়গুলোতে বারবার বন্ধুত্বের মূল্য আমি বুঝতে পেরেছি।
বন্ধুত্বের কারণ যা-ই হয়ে থাক না কেন, সেটা তাদের পাশে দাঁড়ানোর শক্তির ওপর প্রভাব ফেলেনি। জীবনের বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন কারণে যারা বন্ধু হয়েছে, সবাই একই সংকল্পে আমাকে সাহায্য করেছে এবং আমি বিশ্বাস করি ভবিষ্যতেও করবে।
তাদের কারও কারও কথা বলে নিজেকে বড় করতে চাই না বা যাদের নাম ভুলে গেছি, তাদের ছোট করতে চাই না। যে বন্ধুরা চলে গেছে তাদের কথা স্মরণ করে যারা আছে, তাদের প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা দিতে চাই।
আর আরেকটা কথা না বললেই নয়। কিছু সম্পর্ক হয়তো সাধারণ বন্ধুত্বের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। সেই সম্পর্ক অসাধারণ বন্ধুত্বের সম্পর্ক হতে পারে। নিজের জীবনে আমি আমার বাবা-মা-বোনের কাছে যে বন্ধুত্ব পেয়েছি, সেটা আমার জীবনকে অনেক সুন্দর করেছে। আমার পরিবারের কাছে যে বন্ধুসুলভ আচরণ পেয়েছি, তা আমার জীবনকে মধুর করেছে। হয়তো বন্ধুত্বের সংজ্ঞা খোঁজাটাই ভুল। তার চেয়ে আমরা নতুন বন্ধু খুঁজি আর পুরোনো বন্ধুদের কাছে রাখি।
বন্ধুদের সঙ্গে সবার নতুন বছরটা খুব ভালো কাটুক—এই কামনা করি।
জীবন

জীবন



কী আছে জীবনে ? এক অর্থে জীবনটা বড়ই নিরস । বেঁচে থাকাটা একঘেঁয়ে, যান্ত্রিক । কষ্ট এড়িয়ে যাবার সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টার নাম জীবন । এমন একটা খেলা, যেখানে পরাজয়ের শঙ্কা প্রতি পদে পদে । তবুও বেঁচে থাকাটা সৌভাগ্য বৈকি ! অন্তত মানুষের সুখে সুখী হওয়ার, দুঃখের সহভাগী হওয়ার একটা সুযোগ পাওয়া যায় । আবার কখনোবা প্রকৃতির কাছে কৃতজ্ঞতাবোধ করার একটা সুযোগ ঘটে । এই যেমন- রূপালী চাঁদ, ভেসে যাওয়া মেঘ, হু হু করে বয়ে যাওয়া বাতাস, বনভূমির আলোড়ন, আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঘুম ঘুম পাহাড়, ধ্যানমগ্ন নিস্তব্ধতা কিংবা অপিরিচিতা রহস্যময়ী সুন্দরী নারীর নির্নিমেষ চাহনি- এসব বড়ই লোভনীয়, পেলে মনে হয় জীবন বড় রোমাঞ্চকর, আহ্ কী মধুর ! কৃতজ্ঞতায় নুয়ে আসে মাথা । কিন্তু একদিন ফুরিয়ে যাবে সবকিছু এ জীবন থেকে, শেষ হয়ে আসবে সময় । আহ্, যদি কোনদিন মরতে না হতো !



দিন যায় । বছরের পর বছর ঘুরে শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত - আগে যেমন আসতো, এখনো তেমনি আসে, ভবিষ্যতেও আসবে । কিন্তু মানুষ আসে একবারই, যখন যায় চিরকালের জন্যই যায়; কেউ শুকনো পাতার মতো ঝরে বিলীন হয়ে যায়, কেউ রেখে যায় অবিনাশী স্মৃতি ।



জন্মগ্রহণমাএই মানুষ পরকালের টিকিট হাতে ছুটতে শুরু করে ঘন্টায় ষাট্ মিনিট গতিতে, কারো সাধ্য নেই রূখবার । সময় বড় প্রবঞ্চক, খোলা আইসক্রীমের মতো খাওয়া হোক বা না হোক ক্রমশ গলতেই থাকে । আর তাই বেঁধে দেওয়া সময়ের মাপকাঠিতে জীবন মহার্ঘ্য, অত্যন্ত মূল্যবান । কিন্তু তাই বলে সে ভয়ে সারাক্ষণ কুঁকড়ে থেকে পকেটে ভরে রাখবার মতো কিছু নয় । যা যাবেই তা ধরে রাখবার অতিরিক্ত আগ্রহ দেখিয়ে আসলে কোন লাভ নেই ।



জীবন চলমান । ছক বাধাঁ ও ভাঙ্গার খেলা । শত পরিকল্পনার পরও ভবিষ্যতটা অনিশ্চিত । আর তাই অদ্ভুত তার আকর্ষণ, অনাবিল তার বৈচিএ্য । এগিয়ে যেতে হবে, এগিয়ে যাবার নামই জীবন । থেমে যাবার নাম মৃত্যু ।



আসলে, মানুষের শক্তি ও সম্ভাবনাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা । তা-ই হচ্ছে মানুষের জীবন । ব্যক্তি মানুষ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মানুষ, দিন ও দিনান্তের মানুষ । আর তাই মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে কিছু না কিছু করতেই হয় । সবাই নিজের প্রয়োজনটা বোঝে । যারা চালাক-চতুর, জীবনে তারা গুছিয়ে নেয়; যারা বোকা তারা পারে না । কিন্তু জীবনে ঠেকে শিখে সবাই । মানুষ ফিরে ফিরে নিজেকেই দেখতে চায় । তাই স্মৃতির সাগরে ডুবুরির মতো খুঁজে বেড়ায় অতীতের মণি-মুক্তা । স্মৃতি ভারাতুর হতে দারুণ ভাল লাগে ।



মানুষের প্রতি মানুষের মায়া জন্মায়, মায়া থেকে ভালোবাসাও আসে । কিন্তু শ্রদ্ধা যদি তার সঙ্গে না মেশে তবে সে ভালোবাসা এক সময় ফিকে হয়ে যেতে বাধ্য । এক জীবনে মানুষ যা কিছু অধিকার করে, সবকিছুর জন্যই নিজেকে দিয়ে মূল্য দেয়- জ্ঞান দিয়ে, শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, আবার কখনো জীবন দিয়ে ।



দুঃখ-কষ্টই জীবনের নির্যাস । দুঃখের মতো পরশ পাথর আর নেই । মেঘাচ্ছন্ন আকাশের আড়ালে তেজোদ্দীপ্ত সূর্যের মতো দুঃখের ওপারে থাকে অনাবিল সুখের হাতছানি । কে না জানে, যারা জীবনে অনেক দূঃখ-কষ্ট ভোগ করেছে তারাই সুখের প্রকৃত দাবিদার ।



পৃথিবীতে এমন মানুষও আছে, যারা কোন কিছু জমিয়ে রাখার চেয়ে বিলিয়ে দেয়াতেই আনন্দ পায় । বেঁচে থাকার মধ্যে আনন্দটাই তো সবচেয়ে বড়, যে যাতে আনন্দ পায় । রবি ঠাকুরের ভাষায়, “অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন, অন্তরে তাহার বেদনা অপার ।” আগামীকাল তার কাছেই মূল্যবান ও আকাঙ্খিত যে সুন্দর, স্বপ্নময় ও আনন্দময় দিনের পথ চেয়ে থাকে, সব হারানোর মাঝেও আশায় বুক বাঁধতে জানে । “আনন্দের সময় মানুষ দুখেঃর দিনের সম্বল সঞ্চয় করতে ভুলে যায় । আসলে তা নয়, পরিপূর্ণতা যদি ভবিষ্যৎ দৈন্যের কথা স্মরণ করতে পারে, তবে সে পরিপূর্ণ হলো কই ?” (শবনম: সৈয়দ মুজতবা আলী) ।



আজকের পৃথিবীতে ভালোবাসার, আনন্দের ও স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণার বড়ই অভাব । স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, “The world is need of those whose life is one burning love-selfless. The love will make every word tell like a thunderbolt. Awake, awake great souls! The world is burning in misery, can you sleep?”



পৃথিবীতে স্বর্ণালী জীবন যাপনের শ্রেষ্ঠতম উপায় হচ্ছে জীবনের মাঝে আনন্দের অনুসন্ধান । আনন্দ আসে জগৎ ও জীবনের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা থেকে । আর ঈশ্বর তো ভালোবাসার মধ্যেই বিরাজমান । বস্তুর মধ্যে ভালোবাসার মন্দির গড়া যায় না । দেহ ভালোবাসার শএু । মন ও আত্মা দেহহীন, সে-তো ঈশ্বরের পাওনা ।



ভালোবাসাকে যারা অনেকটা দৈবশক্তির মতো মনে করে, তারা বিশ্বাস করে ভালোবাসায় জীবন উজ্জীবিত হয় । জীবনকে যদি শুধুমাএ একটি শব্দে করতে চাই তাহলে ‘ভালোবাসা’ হলো সেই অনিবার্য শব্দ । সমস্ত সৃষ্টিকর্মে ঈশ্বরের অসামান্য কবিত্ব ও ঋষিসুলভ ভালোবাসা আমাদের নিয়ত উদ্দীপিত করে জীবনের পরতে পরতে ভালোবাসা বুকে নিয়ে আনন্দ-সাগরে নিমজ্জিত হতে । দুঃখ-বিপদ, হতাশা-নিরাশার ধূ ধূ বালুচরে তবেই না গড়ে তোলা যাবে স্বপ্নীল পৃথিবীর প্রতিকৃতি, যার প্রাণ ভোমরা হবে ভালোবাসা ও জীবনানন্দ । আজ যারা দুঃখ-উপত্যকায় ক্রন্দসী দেবদূতের ন্যায় দিশেহারা ও ম্রিয়মান, একদিন তারা খুঁজে পাবে রংধনু-রাঙা জীবনের পথ....স্বপ্ন, আনন্দ ও ভালোবাসার পুষ্পাঞ্জলিতে ।

উপদেষ্টা :-
  মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী

সম্পাদক :-
  মোস্তফা ওয়াদুদ

তত্ত্বাবধায়ক :-
  খালেদ হাসান আরাফাত

সহ-সম্পাদক :-
  বাশার উদ্দীন হিমেল
  আফজাল হুসাইন
  কাউসার আহমদ
  ওমর ফারুক

সহকারী সম্পাদক :-
  শিব্বির আহমেদ সাইফি
  আতাউর রহমান মারুফ

সহযোগী সম্পাদক :-
  আসজাদ মীর
  হুমায়ূন কবির রাজিব
  আবু সুফিয়ান মানসূর

পরিবেশনায় :-
  Intisar Media


                               ঠিকানা :-

    মিত্র কলম পাঠক ও লেখক ফোরাম
   জয়দেবপুর, গাজীপুর মহানগর, ১৭০০

HOODLES

Gumbo beet greens corn soko endive gumbo gourd. Parsley shallot courgette tatsoi pea sprouts fava bean collard greens dandelion.

JACKETS & SUIT

Gumbo beet greens corn soko endive gumbo gourd. Parsley shallot courgette tatsoi pea sprouts fava bean collard greens dandelion.

SPORT SHOES

Gumbo beet greens corn soko endive gumbo gourd. Parsley shallot courgette tatsoi pea sprouts fava bean collard greens dandelion.

 
Created By SoraTemplates | Distributed By Gooyaabi Templates