গল্প
গল্প
চৈত্রের প্রখর রোদের মধ্যে এক পথে একজন পথিক (প্রথম পথিক) হাঁটছিলেন। অনেকক্ষণ হাঁটার ফলে ক্লান্ত পথিক তাঁর সামনে একটি বটবৃক্ষ ও সুপেয় পানির সন্ধান পেলেন। পানি পান করে বিশ্রামের পর তিনি বটবৃক্ষের কিছু পাকা ফল ও একটি পাত্রে কিছু পানি নিয়ে আবার তাঁর গন্তব্যের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করলেন। অনেকটা পথ হাঁটার পর একটা জায়গায় এসে তাঁর মনে হলো, আগের বিশ্রামের জায়গাটির মতো যদি এখানেও একটি জায়গা তৈরি করা যেত, তাহলে আমার মতো অনেকেই হয়তো বিশ্রাম নিতে পারত। যেই ভাবা সেই কাজ ৷ তিনি তাঁর তেষ্টার পানি টুকুন দিয়ে ওই রাস্তার পাশে বটবৃক্ষের ফলগুলো পুতে দিলেন। সময়ের পরিক্রমায় বটবৃক্ষ বিশাল এক ছায়াবৃক্ষে পরিণত হলো।
কয়েক বছর পর ওই একই পথে আরেকজন পথিক (দ্বিতীয় পথিক) এক পরিচিতজনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথের ক্লান্তি দূর করতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বটবৃক্ষের ছায়া পেয়ে তিনি খুব পুলকিত হলেন এবং বটবৃক্ষের রোপণকারীকে মনে মনে অনেক ধন্যবাদ দিলেন ও সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর মঙ্গলের জন্য দোয়া করলেন। পরিচিতজনের বাড়িতে গিয়ে তিনি তার সঙ্গে গল্পের এক পর্যায়ে বললেন, বটবৃক্ষের ছায়া থাকায় আসার পথে তিনি অনেক স্বস্তি পেয়েছেন। এটা শুনে তাঁর পরিচিতজন বললেন যে, শেষের বটগাছটি তারই লাগানো ৷ তাঁর ইচ্ছা ছিল ওখানে একটি সুপেয় পানির উৎসের ব্যবস্থাও করবেন ৷ কিন্তু অসুস্থতার জন্য তা আর করা হয়নি। দ্বিতীয় পথিক মনে মনে চিন্তা করলেন, এই ব্যক্তির কাজের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এই ভাবনা থেকেই তিনি একটা সাইনবোর্ড এ লিখলেন, ‘এই গাছের রোপণকারী এক্স সাহেব, তিনি এখন অসুস্থ ৷ আপনারা যাঁরা এখানে বসে বিশ্রাম করবেন, সবাই তাঁর জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করবেন৷ ’ প্রথম পথিকের স্থায়ী ঠিকানাও তিনি ওখানে যুক্ত করে সাইনবোর্ডটিকে বটবৃক্ষের কাছে স্থাপন করলেন।
কয়েক বছর পর ওই একই পথে আরেকজন পথিক (দ্বিতীয় পথিক) এক পরিচিতজনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথের ক্লান্তি দূর করতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বটবৃক্ষের ছায়া পেয়ে তিনি খুব পুলকিত হলেন এবং বটবৃক্ষের রোপণকারীকে মনে মনে অনেক ধন্যবাদ দিলেন ও সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর মঙ্গলের জন্য দোয়া করলেন। পরিচিতজনের বাড়িতে গিয়ে তিনি তার সঙ্গে গল্পের এক পর্যায়ে বললেন, বটবৃক্ষের ছায়া থাকায় আসার পথে তিনি অনেক স্বস্তি পেয়েছেন। এটা শুনে তাঁর পরিচিতজন বললেন যে, শেষের বটগাছটি তারই লাগানো ৷ তাঁর ইচ্ছা ছিল ওখানে একটি সুপেয় পানির উৎসের ব্যবস্থাও করবেন ৷ কিন্তু অসুস্থতার জন্য তা আর করা হয়নি। দ্বিতীয় পথিক মনে মনে চিন্তা করলেন, এই ব্যক্তির কাজের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এই ভাবনা থেকেই তিনি একটা সাইনবোর্ড এ লিখলেন, ‘এই গাছের রোপণকারী এক্স সাহেব, তিনি এখন অসুস্থ ৷ আপনারা যাঁরা এখানে বসে বিশ্রাম করবেন, সবাই তাঁর জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করবেন৷ ’ প্রথম পথিকের স্থায়ী ঠিকানাও তিনি ওখানে যুক্ত করে সাইনবোর্ডটিকে বটবৃক্ষের কাছে স্থাপন করলেন।
এর অনেক দিন পর একজন খুব বুদ্ধিমান ও মেধাবী (তিনি নিজেকে তা-ই মনে করেন) পথিক (তৃতীয়) ওই একই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। স্বভাবতই তিনি প্রথম বৃক্ষের ছায়া ও পানি পান করে অভিভূত হলেন। দ্বিতীয় বৃক্ষের কাছে গিয়ে পানি না পেয়ে তিনি কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেন ৷ মনে মনে বললেন, কোন নির্বোধ লোক এই কাজ করল যে শুধু একটি গাছ রোপণ করল? এইটুকুন বুদ্ধি নাই যে গাছের সঙ্গে পানিও রাখতে হয়? এই বলে সে যখন মনে মনে ওই ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা নিয়ে মনে মনে হাসছিল, সেই মুহূর্তে তাঁর চোখে সাইনবোর্ডটি পড়ল। এর লেখা পড়ে তো বুদ্ধিমান পথিকের মাথা আরও খারাপ হয়ে গেল। নিজের দেশের মানুষদের এমন নির্বোধ এক লোককে এত শ্রদ্ধা দিতে দেখে মনে মনে চিন্তা করলেন, তিনি পরিকল্পিত একটি বিশ্রামস্থল তৈরি করবেন ৷ এরপর ওই ব্যক্তি ও অন্যদের বুঝিয়ে দেবেন যে সত্যিকারের প্রশংসা কারা পেতে পারে। তিনি তাঁর ঝোলা থেকে বৃক্ষের বীজ নিয়ে আগের গাছের বিপরীত দিকে রোপণ করলেন ও পরিচর্যা করতে লাগলেন।
একদিন এক সাধারণ বৃদ্ধ পথিক ওই পথে যাচ্ছিলেন এবং তিনি বুদ্ধিমান পথিককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি বাপু এখানে কিসের পরিচর্যা করছো? ’ বুদ্ধিমান পথিক উত্তর করলেন, ‘আমি এই গাছের ছায়ার চেয়ে অনেক বড় ছায়া এবং আরও ভালো বিশ্রামস্থল তৈরির কাজ করছি। ’ বৃদ্ধ বললেন, ‘এখানে একটা গাছ থাকতে আরেকটা গাছের কী দরকার? ’ জবাবে বুদ্ধিমান পথিক উত্তর দিলেন, ‘বুড়ো হতে হতে আপনার বুদ্ধি তো সব নষ্ট হয়ে গেছে, যান নিজের পথে হাঁটেন, আমাকে জ্ঞান দেওয়া লাগবে না, আমি অনেক বুঝি। ’ বৃদ্ধ পথিক যাওয়ার পর তার মেধাবীরে মাথায় আরেকটা বুদ্ধি হলো যে, সে আগের গাছটাকেও মেরে ফেলবে ৷ অন্যথায় এই বৃদ্ধের মতো অনেক নির্বোধ তার মহৎ উদ্দেশ্যটা উপলব্ধিই করতে পারবে না।
যেই ভাবা সেই কাজ ৷ বুদ্ধিমান পথিক প্রতি রাতে বটবৃক্ষের একটি একটি করে শিকড় কাটতে থাকলেন। এত দিনে তার রোপণ করা গাছও এক হাতের মত বড় হয়েছে ৷ কিন্তু আগের বটবৃক্ষটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছিল। এমন অবস্থা দেখে যখন কোনো পথিক বুদ্ধিমান পথিককে জিজ্ঞেস করত, ‘কি হে ভাই, এত বড় গাছটা মরে যাচ্ছে যে, কিছু দেন নাকি? ’ প্রত্যুত্তরে বুদ্ধিমান পথিক বলতেন, ‘আরে এই গাছটা যে ব্যাটা লাগিয়েছে সে তো বোকা ছিল ৷ গাছের বাঁচার জন্য যে পানি দরকার, সে ব্যবস্থা সে করে নাই ৷ আর আমি তো আমার গাছ বড় করা নিয়েই ব্যস্ত, ওর গাছে আমি পানি দেব কেন? কিছুদিন অপেক্ষা করো আমার এই গাছ অনেক বড় হবে এবং আমি এখানে সুপেয় পানির ও ব্যবস্থা করব। ’
এভাবে দিন যায় মাস যায় কিন্তু বুদ্ধিমান পথিকের গাছ আর বড় হয় না। কিন্তু এত দিনে পূর্বের বটবৃক্ষও মরে গেছে। একদিন ওই বৃদ্ধ আবার এলেন এবং বুদ্ধিমান পথিককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হে বাপু, কোথায় তোমার বিশ্রামস্থল? ’ এই বলে তিনি বুদ্ধিমান পথিকের রোপণ করা গাছের কাছে এসে দেখে বললেন, ‘এ তো দেখি পাকুন্দগাছ (এক ধরনের গুল্ম জাতীয় গাছ, যার পাতা দেখতে বটবৃক্ষের মতো এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে) ৷ এটা কীভাবে ছায়া দেবে? ’ এই কথায় বুদ্ধিমান পথিক খুব খেপে গিয়ে বললেন, ‘তোমাদের এই এক দোষ, কোনো ভালো কাজের স্বীকৃতি দিতে জানো না৷ আমি যে এত কষ্ট করে এত জরুরি একটা ঔষধি গাছ এখানে রোপণ করে পরিচর্যা করে এত বড় করালাম, এর কোনো স্বীকৃতিই দিলে না? ’ জবাবে বৃদ্ধ পথিক বললেন, ‘এই পথের কাছে আমাদের ছায়া এবং পানির দরকার, এখানে এই ঔষধি গাছ দিয়ে আমরা কী করব বাপু? ’ এই কথা বলে বৃদ্ধ আপনমনে বিড়বিড় করতে করতে ওই স্থান ত্যাগ করলেন।
তৃতীয় বুদ্ধিমান পথিক এতটাই বুদ্ধিমান যে, তার মাথায় এইটুকুন বুদ্ধি এল না যে, ‘আমি প্রথম পথিক যে পর্যন্ত তৈরি করেছেন সেইটুকুর চারদিকে সুন্দর করে বাঁধিয়ে দিয়ে একটি সুপেয় পানির উৎসের ব্যবস্থা করে দিলেও লোকে আমার নামেও ধন্যবাদসূচক এমনি একটা নামফলক এখানে লাগাতে পারে এবং একই সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় পথিকের জন্যও দোয়া করবে। ’ আমরা বাঙালিরা আসলে কারও ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নিজের দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেয়ে এই তৃতীয় পথিকের মতো ভিত্তি তৈরি করতেই বেশি পছন্দ করি।
আমাদের বাংলাদেশের ৫ শতাংশ লোক হলো প্রথম পথিকের মতো ৷ ১০ শতাংশ হলো দ্বিতীয় পথিকের মতো ৷ ৭৫ শতাংশ লোক হলো তৃতীয় পথিকের মতো ৷ বাকি ১০ শতাংশ অন্যান্য চরিত্রের ৷ যার কারণে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও আমরা ওই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। একই কাজ বার বার করে আত্মস্বীকৃত মেধাবী বা বুদ্ধিমান অথবা পরোপকারী হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত আছি। অথচ উন্নত দেশগুলোতে বেশির ভাগ লোকই প্রথম পথিকের মতো ৷ অল্প কিছু সংখ্যক বাদে সবাই দ্বিতীয় পথিকের মতো। তৃতীয় পথিকের মতো লোক নাই বললেই চলে ৷ তাই এদের উন্নয়ন বা সামনে এগিয়ে যাওয়া ঠেকাতে পারে না।
তাই সত্যিকারে আমাদের যা করা উচিত তা হলো, এই গল্পের তৃতীয় পথিকের মতো নতুন গাছ না লাগিয়ে যে গাছ আছে, তার সৌন্দর্য বর্ধনে মনোযোগী হওয়া। এতে করে ১০ বছরে না হোক আগামী ১৫ বছরে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২৫ বছরের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারব। অন্যথায় এই তৃতীয় শ্রেণির লোকজনের এমন আগ্রাসী মনোভাবের কারণে সব বটগাছ ধ্বংসের ফলে পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা বটের সুশীতল ছায়া তো দিতেই পারব না বরং পাকুন্দগাছ দেখিয়ে তাঁদের বটগাছ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। উপরন্তু সব চৈত্রের খরতাপ রৌদ্র এবং শ্রাবণের বর্ষার মধ্যেই ছায়া ছাড়া এক দুঃস্বপ্নের পথ তাদের পারি দিতে হবে।
একদিন এক সাধারণ বৃদ্ধ পথিক ওই পথে যাচ্ছিলেন এবং তিনি বুদ্ধিমান পথিককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি বাপু এখানে কিসের পরিচর্যা করছো? ’ বুদ্ধিমান পথিক উত্তর করলেন, ‘আমি এই গাছের ছায়ার চেয়ে অনেক বড় ছায়া এবং আরও ভালো বিশ্রামস্থল তৈরির কাজ করছি। ’ বৃদ্ধ বললেন, ‘এখানে একটা গাছ থাকতে আরেকটা গাছের কী দরকার? ’ জবাবে বুদ্ধিমান পথিক উত্তর দিলেন, ‘বুড়ো হতে হতে আপনার বুদ্ধি তো সব নষ্ট হয়ে গেছে, যান নিজের পথে হাঁটেন, আমাকে জ্ঞান দেওয়া লাগবে না, আমি অনেক বুঝি। ’ বৃদ্ধ পথিক যাওয়ার পর তার মেধাবীরে মাথায় আরেকটা বুদ্ধি হলো যে, সে আগের গাছটাকেও মেরে ফেলবে ৷ অন্যথায় এই বৃদ্ধের মতো অনেক নির্বোধ তার মহৎ উদ্দেশ্যটা উপলব্ধিই করতে পারবে না।
যেই ভাবা সেই কাজ ৷ বুদ্ধিমান পথিক প্রতি রাতে বটবৃক্ষের একটি একটি করে শিকড় কাটতে থাকলেন। এত দিনে তার রোপণ করা গাছও এক হাতের মত বড় হয়েছে ৷ কিন্তু আগের বটবৃক্ষটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছিল। এমন অবস্থা দেখে যখন কোনো পথিক বুদ্ধিমান পথিককে জিজ্ঞেস করত, ‘কি হে ভাই, এত বড় গাছটা মরে যাচ্ছে যে, কিছু দেন নাকি? ’ প্রত্যুত্তরে বুদ্ধিমান পথিক বলতেন, ‘আরে এই গাছটা যে ব্যাটা লাগিয়েছে সে তো বোকা ছিল ৷ গাছের বাঁচার জন্য যে পানি দরকার, সে ব্যবস্থা সে করে নাই ৷ আর আমি তো আমার গাছ বড় করা নিয়েই ব্যস্ত, ওর গাছে আমি পানি দেব কেন? কিছুদিন অপেক্ষা করো আমার এই গাছ অনেক বড় হবে এবং আমি এখানে সুপেয় পানির ও ব্যবস্থা করব। ’
এভাবে দিন যায় মাস যায় কিন্তু বুদ্ধিমান পথিকের গাছ আর বড় হয় না। কিন্তু এত দিনে পূর্বের বটবৃক্ষও মরে গেছে। একদিন ওই বৃদ্ধ আবার এলেন এবং বুদ্ধিমান পথিককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হে বাপু, কোথায় তোমার বিশ্রামস্থল? ’ এই বলে তিনি বুদ্ধিমান পথিকের রোপণ করা গাছের কাছে এসে দেখে বললেন, ‘এ তো দেখি পাকুন্দগাছ (এক ধরনের গুল্ম জাতীয় গাছ, যার পাতা দেখতে বটবৃক্ষের মতো এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে) ৷ এটা কীভাবে ছায়া দেবে? ’ এই কথায় বুদ্ধিমান পথিক খুব খেপে গিয়ে বললেন, ‘তোমাদের এই এক দোষ, কোনো ভালো কাজের স্বীকৃতি দিতে জানো না৷ আমি যে এত কষ্ট করে এত জরুরি একটা ঔষধি গাছ এখানে রোপণ করে পরিচর্যা করে এত বড় করালাম, এর কোনো স্বীকৃতিই দিলে না? ’ জবাবে বৃদ্ধ পথিক বললেন, ‘এই পথের কাছে আমাদের ছায়া এবং পানির দরকার, এখানে এই ঔষধি গাছ দিয়ে আমরা কী করব বাপু? ’ এই কথা বলে বৃদ্ধ আপনমনে বিড়বিড় করতে করতে ওই স্থান ত্যাগ করলেন।
তৃতীয় বুদ্ধিমান পথিক এতটাই বুদ্ধিমান যে, তার মাথায় এইটুকুন বুদ্ধি এল না যে, ‘আমি প্রথম পথিক যে পর্যন্ত তৈরি করেছেন সেইটুকুর চারদিকে সুন্দর করে বাঁধিয়ে দিয়ে একটি সুপেয় পানির উৎসের ব্যবস্থা করে দিলেও লোকে আমার নামেও ধন্যবাদসূচক এমনি একটা নামফলক এখানে লাগাতে পারে এবং একই সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় পথিকের জন্যও দোয়া করবে। ’ আমরা বাঙালিরা আসলে কারও ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নিজের দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেয়ে এই তৃতীয় পথিকের মতো ভিত্তি তৈরি করতেই বেশি পছন্দ করি।
আমাদের বাংলাদেশের ৫ শতাংশ লোক হলো প্রথম পথিকের মতো ৷ ১০ শতাংশ হলো দ্বিতীয় পথিকের মতো ৷ ৭৫ শতাংশ লোক হলো তৃতীয় পথিকের মতো ৷ বাকি ১০ শতাংশ অন্যান্য চরিত্রের ৷ যার কারণে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও আমরা ওই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। একই কাজ বার বার করে আত্মস্বীকৃত মেধাবী বা বুদ্ধিমান অথবা পরোপকারী হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত আছি। অথচ উন্নত দেশগুলোতে বেশির ভাগ লোকই প্রথম পথিকের মতো ৷ অল্প কিছু সংখ্যক বাদে সবাই দ্বিতীয় পথিকের মতো। তৃতীয় পথিকের মতো লোক নাই বললেই চলে ৷ তাই এদের উন্নয়ন বা সামনে এগিয়ে যাওয়া ঠেকাতে পারে না।
তাই সত্যিকারে আমাদের যা করা উচিত তা হলো, এই গল্পের তৃতীয় পথিকের মতো নতুন গাছ না লাগিয়ে যে গাছ আছে, তার সৌন্দর্য বর্ধনে মনোযোগী হওয়া। এতে করে ১০ বছরে না হোক আগামী ১৫ বছরে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২৫ বছরের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারব। অন্যথায় এই তৃতীয় শ্রেণির লোকজনের এমন আগ্রাসী মনোভাবের কারণে সব বটগাছ ধ্বংসের ফলে পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা বটের সুশীতল ছায়া তো দিতেই পারব না বরং পাকুন্দগাছ দেখিয়ে তাঁদের বটগাছ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। উপরন্তু সব চৈত্রের খরতাপ রৌদ্র এবং শ্রাবণের বর্ষার মধ্যেই ছায়া ছাড়া এক দুঃস্বপ্নের পথ তাদের পারি দিতে হবে।
0 Comments :